মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন
আবুল হাসনাত মিনহাজ : দক্ষিণ চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ চলাচলের একমাত্র সুবিধা জনক সড়ক নতুন ব্রিজ। এই নতুন ব্রিজ এলাকা জুড়ে লেগে থাকে দীর্ঘ যানজট। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে সড়কের উপরে অবৈধ গাড়ি পার্কিং ও মূল সড়কে অটোরিকশা চলাচল। এই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে একটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স থাকলেও নিরব ভূমিকায় ট্রাফিক পুলিশ।
স্থানীয় জণগণ জানান, প্রতিনিয়ত মামলা দিচ্ছে পুলিশ তবে এইভাবে করে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। অটোরিকশার বিরুদ্ধে জোড়ালো অভিযান দিতে হবে নগরের মূল সড়কে। ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা যে পরিমানে বেড়েছে তা বলার মতো না।অনেক সময় ট্রাফিক পুলিশের গা ঘেঁষে চলে যায় তারা দেখে ও না দেখার মতো থাকে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন,কাঠামোগত কারণেই এসব রিকশা সড়কের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ২০ বছর আগে যখন এসব বাহন চালু হয় তখন সরকার নির্দিষ্ট পলিসি, মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে এ পরিস্থিতি হতো না।এখন আর রাতারাতি এসব বাহন বন্ধ করার সুযোগ নেই মনে করলেও অনিরাপদ অবস্থায় এসব বাহনের সংখ্যা যাতে না বাড়ে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দরকার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বাহনগুলোর উপর চালক বা মালিকদের পরিবারই নির্ভরশীল নয় বরং যাত্রীরাও অভ্যস্ত হয়ে গেছে। কারণ পায়ের রিকশার তুলনায় এসব বাহনে ভাড়ার ক্ষেত্রে আর্থিক সাশ্রয় যেমন হয় তেমনি সময়ও বাঁচে অনেক। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি এসব নির্ভরতার কারণগুলোও বিবেচনায় রাখতে হবে।
ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের পক্ষে যেমন অনেকে লিখেছেন, তেমনি এ ধরনের ঘোষণা নতুন করে চাঁদাবাজি বৃদ্ধির সুযোগ করে দেবে বলেও মন্তব্য করেছেন। আবার অনেকেই এসব রিকশার মান নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করে চালু রাখার পক্ষে মন্তব্য করেছেন।
এছাড়া এসব রিকশা চার্জ দিতে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। বলছেন, সরকার বা নির্ধারিত সংস্থা এদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা করে দিতে পারে। তাহলে এ সমস্যার সমাধান হয়। এছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ করে অনেকে মন্তব্য করেন। আবার প্রতিটি এলাকায় এসব অবৈধ রিকশা পরিচালনা করে চাঁদাবাজি করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের কর্মী বাহিনী। নগরের নতুন ব্রিজ চত্বরে, নোমান কলেজ রোড,চাক্তাই,তুলাতলি, বউ বাজার, টেরি বাজার,আন্দরকিল্লা, এক্সেসরোড,কোতোয়ালি,বাকলিয়া,চাঁদগাঁও, হালিশহর,পাহাড়তলী সহ মূল সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এসব অবৈধ রিকশা পরিচালনা করেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। বিশাল অংকের চাঁদা আদায়ে ফায়দা লোটে একাধিক নেতাকর্মী। যার মূল কারণে সড়কে দাপিয়ে বেড়ার সুযোগ পায় চালকরা।
বাংলাদেশে ২০০৩-০৪ সাল থেকেই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, ইজি-বাইক চীন থেকে আমদানি করা হচ্ছিল। যেগুলো কাঠামোগতভাবে কিছুটা নিরাপদ ছিল। তবে, ২০১০ সাল থেকে স্থানীয়ভাবে এসব বাহন তৈরির উদ্যোগ নেয়ার পর থেকে দেখা যায় কারিগরি মান ঠিক না থাকায় সড়কে-মহাসড়কে এসব বাহন দুর্ঘটনার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সংকটের কারণ হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যাল পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেন, “ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো একেবারেই অনিরাপদ।কারণ পায়ে চালিত রিকশাগুলোতে মোটর লাগানো হয়েছে। কাঠামোগতভাবে একেবারেই এর সক্ষমতা নাই। কারণ মোটর লাগানোর ফলে যে গতিতে এগুলো চলে কাঠামোগতভাবে এটা সমর্থন করে না। তাই সবসময়ই এ ধরনের যানবাহনের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান ছিল।”
তবে, দেশে ব্যাপক হারে চালু হওয়া এসব বাহন এখন আর বন্ধ করার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন তারা। বরং এসব বাহনের দুর্বলতা নিরসন করে কিছুটা পরিবর্তন করে নিরাপদভাবে চলার উপযোগী করা যায়। একইসাথে সুনির্ধারিত পলিসি করে লাইসেন্স দিলে সরকার রাজস্ব হারাবে না বলে মনে করেন।
আমাদের দেশের সচেতন মহলের লোকেরা জানান,“যখন এ ধরনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার কথা ছিল তখন করা হয়নি। ফলে রাতারাতি বন্ধ করার এখন আর কোনো সুযোগ নেই। তবে, এগুলোর সংখ্যা যাতে আর না বাড়ে সেজন্য নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে হবে। এসব বাহনের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করলে এগুলো ধীরে ধীরে একটা সময় বন্ধ হয়ে যাবে। তাই পলিসি মজবুত করতে হবে।”
নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সুষ্ঠু নীতিমালা থাকলে এসব বাহন গত ২০ বছরে এতো ব্যাপক হারে বৃদ্ধি হতো না বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। ফলে কারিগরি মান নির্ণয় করে রুট নির্ধারণের পর নিবন্ধনের আওতায় আনলে সরকারের কাছে এসব বাহনের সঠিক সংখ্যা থাকতো বলেও মনে করেন তারা।
চট্টগ্রাম ট্রাফিক বিভাগ দক্ষিণের ডিসি মাহবুব আলম খান বলেন, “যেহেতু ব্যাটারিচালিত রিকশা সব রাস্তায় অনুমোদিত নয় তাই আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করছি। মূল সড়কে যেখানে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা দেখা মাত্র রিকশা জব্দ করা হয়।আমাদের পক্ষ থেকে অভিযান চলমান রয়েছে।”